Header Ads Widget

কালই আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

 কালই আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল-এ রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''ররিবার বিকেল তিনটার পর থেকে উপকূলে আঘাত হানা শুরু করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে আঘাত হানতে পারে উপকূলে।''

তিনি জানান, ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার কোন শঙ্কা নেই।আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঘূর্নিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।রিমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ– বালি। এটি ওমানের দেয়া নাম।তবে, রিমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে বলে এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন মি. ফারুক।

ঝড়ের গতিপথ

ছবির উৎস,BANGLADESH METEOROLOGICAL DEPARTMENT

ছবির ক্যাপশান,ঝড়ের গতিপথ

এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। রোববার ভোর রাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে উপকূলীয় এলাকায়।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি মোকাবিলায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা এই ছয়টি জেলায় বিশেষ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।

তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে স্থানীয় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন:
ঘূর্ণিঝড় হলে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,রিমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ– বালি।

শনিবারে প্রকাশিত আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ৮) বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

যেভাবে ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে আসছে, তাতে রোববার দুপুরের পর বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।

আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং অদূরবর্তীদ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রামে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয় বলেছে আবহাওয়া অফিস।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে রোববার মধ্যরাত নাগাদ আঘাত হানতে পারে রেমাল।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে রোববার আঘাত হানতে পারে রিমাল।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রিমাল একটি “প্রবল ঘূর্ণিঝড়” হতে পারে।

সেক্ষেত্রে, এই ঘূর্ণিঝড়টি সর্বপ্রথম যেখানে আঘাত হানবে, সেখানের বাতাসের গতিবেশ ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৬ দশমিক পাঁচ বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে, তখন ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়।

এখন, যদি কোনও নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয়।

কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৯ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটিকে সিভিয়ার সাইক্লোন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

বাতাসের গতিবেগ যদি এর থেকেও বেশি হয়, তখন তা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর পরের ধাপ হল সুপার সাইক্লোন।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে আঘাত হানা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন ছিল ২০০৭ সালের সিডর (চোখ)। এটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। তখন ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিলো।

রিমাল-এর গতিবেগ সম্বন্ধে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “সিডরের মতো অত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় না এটি, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সিডরের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।”

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
ঘূর্ণিঝড়

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় হতে হলে প্রথমে সাগরে লঘু চাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ যখন ১৭ কিলোমিটার থাকে এবং বায়ুর চাপ কম থাকে তখন একে লঘু চাপ বলা হয়।

বাতাসে যদি ঘুর্নন তৈরি হয়, অর্থাৎ ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে যায়। কারণ আশেপাশে থেকে জলীয় বাষ্প আসে। জলীয় বাষ্প আসলে বায়ুর চাপ কমে যায়।

এরপরের ধাপে রয়েছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ।

এর আগে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ লঘুচাপ শক্তির মাত্রা অর্জন করে ৩১ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ থাকলে একে সুস্পষ্ট লঘুচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়।”

তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

মি. মল্লিক বলেন, “সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় নিম্নচাপ। এরপর নিম্নচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ”।

পরে এটা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে এই আবহাওয়াবিদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

Post a Comment

0 Comments